আত্মবিশ্বাস মানুষের এমন একটি গুণ যা তাকে সফলতার শীর্ষে পৌছে দেয়। অন্যরা যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করে, একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ সে সময়ে কি করা উচিত তা নির্ধারণ করে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে উন্নতি লাভ করে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস আমাদের কয়েক ধাপ এগিয়ে রাখে।সাধারণত আমরা একজন মানুষকে পছন্দ করি কয়েকটি বিষয়ের ভিত্তিতে, যেমন : সৌন্দর্য, আচার-আচরণ, বুদ্ধিমত্তা! কিন্তু মনের অজান্তেই হোক আর জানায়, যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আমাদের মনকাড়ে তা হল আত্মবিশ্বাস! কখনো ভেবে দেখেছেন অধিকাংশ মেয়েরা খারাপ ছেলেদেরই কেন পছন্দ করে? কারণ তাদের আত্মবিশ্বাস সাধারণ ছেলেদের চেয়ে বেশি যা অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রবলভাবে । আবার একটি চাকুরির ভাইভাতে আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিটিকেই সকলে অধিক পছন্দ করে।নেতৃত্বদানের জন্য প্রথম ও সর্বপ্রধান শর্ত হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। কারণ আপনি নিজেই যদি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন তাহলে আপনার দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই জীবনে সফলতা অর্জনে আত্মবিশ্বাসের পরিপূরক কিছু হতে পারে না। কিন্তু এটা সত্য যে সকলেই জন্মগতভাবে আত্মবিশ্বাসী হয় না। তবে চেষ্টা করলেই নিজের মাঝে আত্মবিশ্বাস নিয়ে আসা যায়।
নিচের টিপসগুলো ফলো করলে আপনি আত্মবিশ্বাসী না হয়ে থাকলেও আত্মবিশ্বাসী হওয়ার সুফল লাভ করবেন এবং অন্যকে বোঝাতে পারবেন আপনি আত্মবিশ্বাসী:-
১)সোজা হয়ে দাঁড়ান।
একটি সুন্দর দেহভঙ্গির মাধ্যমে আপনাকে প্রায় দিগুণ বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখাবে। তাই এটি প্রথমেই বলে নেওয়া উচিত। দেহকে এমনভাবে রাখবেন যেন আপনার মাথায় কেউ দড়ি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে! দেয়ালের সাথে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আপনার দু পায়ের গোড়ালি, কাধের পেছন দিক ও মাথার পেছন দেওয়ালের সাথে স্পর্শ করান। এভাবে দাঁড়ালে আপনাকে অধিক আত্মবিশ্বাসী দেখাবে তাই এভাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। মাথা সোজা রাখবেন, নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলে বা হাটলে আপনাকে কম আত্মবিশ্বাসী মনে হবে। বিশেষ করে কাধের পেছন দিকটা সোজা রাখবেন, সামনের দিকে ঝুকাবেন না। বসার সময়েও একই পন্থা অবলম্বন করবেন।
২)যতটা সম্ভব নিজের জন্য জায়গা নিন।
কম আত্মবিশ্বাসী মানুষেরা তাদের ইনসিকিউর মনোভাবের কারনে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। অর্থাৎ খুব কম জায়গা নিয়ে তারা বসে থাকে বা দাঁড়ায়। তাই আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য জায়গা নিন। হাত পা ছড়িয়ে বসুন। যাতে আপনার দেহ অনেকটা জায়গা নিয়ে নেয়। এভাবে আপনি অন্যকে বোঝাতে পারবেন আপনি অনেক আত্মবিশ্বাসী।
৩)সুন্দর পোশাক পড়ুন।
একটি আকর্ষণীয় পোশাক আপনার নিজের সম্পর্কে একটি ভালো ইমপ্রেশন দেবে যার ফলে আপনি তৎক্ষণাৎ অধিক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।
৪)প্রথমে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করুন
যদি সম্ভব হয় তবে আপনি আগে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করুন। অন্যজনের হাত খুব হালকাভাবে ধরলে মনে হবে আপনি নার্ভাস, তাই মোটামুটি শক্ত করে ধরুন। এবং মনোবিজ্ঞান বলে গরম হাতে হ্যান্ডশেক করলে অপর মানুষটি আপনাকে বেশি পছন্দ করবে।
৫)মুচকি হাসুন।
হাসি উচ্চ আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ। তাই সম্ভব হলে সবসময় মুচকি হাসুন। তবে মেকী হাসি না হাসাই ভালো। হাসির অভিনয় করলে সহজেই ধরা পড়ে যেতে পারেন।তাই আগে আয়নার সামনে সুন্দর করে মুচকি হাসার প্রাকটিস করুন এবং সর্বদা মুখে হাসি রাখুন।
৬)চোখে চোখ রেখে কথা বলুন।
চোখে চোখ রেখে কথা বলার সময় আপনি অন্যের ব্রেনে মেসেজ পাঠাচ্ছেন যে আপনি খুব আগ্রহের সাথে কথা বলছেন আপনি সবকিছু গুরুত্বসহকারে শুনছেন। স্বভাবতই অপর মানুষটি আপনাকে আত্মবিশ্বাসী ধরে নেবে এবং আপনাকে পছন্দ করবে ।
৭)ধীরে সুস্থে ও আস্তে কথা বলুন।
মানুষ যখন খুব ভয় পায় ও নার্ভাস হয়ে যায় তখন খুব দ্রুত ও জোরে কথা বলে। কিন্তু আপনি যদি ধিরে ও আস্তে কথা বলেন তবে সবকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে পারবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ শব্দে জোর দিতে পারবেন। এতে আপনাকে অনেক বেশি কনফিডেন্ড লাগবে। তাই সর্বদা ধীরে ও আস্তে শব্দ করে কথা বলুন।
৮)হাত নাড়িয়ে কথা বলুন।
এটি একটি অসাধারণ কার্যকরী উপায়। সঠিকভাবে হাত নাড়িয়ে কথা বললে শ্রোতার মষ্তিষ্ক আপনাআপনি ধরে নেবে আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে হাত নাড়িয়ে কথা বলা সামাজিক ভাবে দৃষ্টিকটু সেদিকটা খেয়াল রাখবেন।
৯)অকারনে ও অতিরঞ্জিত ক্ষমা চাওয়া বন্ধ করুন।
পথে কারো সাথে ধাক্কা লেগেছে? আপনার দোষ নেই তবুও আপনি ক্ষমা চেয়েছেন? এটি কম আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ। যেসকল মানুষদের আত্মবিশ্বাস কম, তারা এ কাজটি করে থাকে। তাই আপনার ভুল না হলে কখনো ক্ষমা চাবেন না।
১০)প্লান করে কাজ করুন।
যদি কারো সাথে প্রথম কথা বলতে যান তাহলে আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন কি কি জিজ্ঞাস করবেন। এতে আপনাকে অধিক পরিমাণে আত্মবিশ্বাসী মনে হবে এবং প্লান করে এগুনোর কারনে মনের ভয় কমে আসবে।
১১)নিজেকে জিজ্ঞাস করুন:কি খারাপ হতে পারে?
আত্মবিশ্বাসের প্রধান শত্রু হলো ভয়। তাই ভয়কে জয় করা বাঞ্ছনীয়।যখন কোনো কাজ, হতে পারে কাউকে প্রোপোজ দেওয়ার সময়, ভয়ের কারনে এগুতে পারেন না তখন নিজেকে জিজ্ঞাস করুন: এই কাজটা করলে কি ক্ষতি হবে? সে সমস্যাগুলো হতে পারে সেগুলো কি আপনি কাটিয়ে উঠতে পারবেন না? যদি পারেন তবে কেন কাজটি করে দেখবেন না?
১২)নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বের হউন।
যেসব কাজ করতে আপনি নার্ভাস হয়ে পড়েন বা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন সেই সব কাজ বেশি বেশি করে করুন। এতে খুব দ্রুত আপনার আত্মবিশ্বাস প্রবল হবে এবং আপনি জীবনের অজানা আনন্দগুলোকে খুজে পাবেন। মনে রাখবেন, আপনার আসল সুখ, আপনার কমফোর্ট জোনের বাইরে।
![]() |
Confident Look |